আদালত অবমাননাঃ মাহমুদুর রহমান ও আমার দেশ প্রসঙ্গে
>> Monday, July 19, 2010
ফরহাদ মজহার
source: http://sonarbangladesh.com/article.php?ID=3177
আমরা আদালত অবমাননা নিয়ে লিখবো। নানান সময়ে নানান ব্যক্তি আদালত অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন। আদালত, সংবিধান, আইন ও ইনসাফ যে দিক থেকেই দেখি না কেন, আদালত অবমাননা সংক্রান্ত প্রশ্নটির মীমাংসা সহজ কর্ম নয়। কেন নয় তার প্রধান কারণ আদালত অবমাননার প্রশ্নটি চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতাসহ বাক ও ব্যক্তির স্বাধীনতার প্রশ্নের সাথে সরাসরি জড়িত। গণতান্ত্রিক সংবিধান এক দিকে চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করে এবং বাক ও ব্যক্তির স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়ায়; নাগরিকদের এই অধিকারগুলো রক্ষার দায়ও আদালত স্বীকার করেন। অথচ অন্য দিকে আদালতকে সতর্ক থাকতে হয় যেন নাগরিক ও মৌলিক মানবাধিকার এমন কোন সীমা লঙ্ঘন না করে, যাতে আদালতের বিচারপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। শ্যামও রাখা চাই, কুলও ঠিক রাখতে হবে। এ টানাপোড়নের মধ্যেই আদালত অবমাননা সংক্রান্ত তর্কটি আদালত, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও বিচারশাস্ত্রে আজ অবধি চলে আসছে। এর কোন পরিচ্ছন্ন মীমাংসা নাই। এক ধরনের জোড়াতালি দিয়ে এই ভাবে মীমাংসা করা হয় যে, যদি সংবিধানে দেওয়া অধিকার চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা রাষ্ট্র বিশেষ ভাবে আদালতকে নিশ্চিত করতে হয় তাহলে আদালতের যে কোন কর্মকাণ্ড, রায়, সিদ্ধান্ত, সমালোচনা ও পর্যালোচনা করবার অধিকার নাগরিকদের আছে, তা স্বীকার করে নিতে হবে। তবে কোন বক্তব্য বা লেখালেখি আদৌ আদালতের অবমাননা হচ্ছে কি না, সেটা বিচারকরাই ঠিক করবেন। এই অস্বস্তিকর মীমাংসার মধ্য দিয়ে এটাই স্বীকার করে নেওয়া হয় যে, আদালত পারতপক্ষে কোন নাগরিকের বিরুদ্ধে ‘আদালত অবমাননার’ অভিযোগ আনবে না। যদি কোন বিচারক মনে করেন কোন চলমান বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, তবে বাধ্য হলে তিনি ‘আদালত অবমাননার’র অভিযোগ আনবার ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন। সেই এখতিয়ার তাঁর থাকবে। এর মধ্য দিয়ে তথাকথিত আধুনিক বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কাঠামোগত সঙ্কটটাই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এক দিকে চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা আবার অন্য দিকে আদালতের সার্বভৌম এখতিয়ার ও ক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখা এই স্ববিরোধিতার মধ্যে আধুনিক রাষ্ট্র ক্রমাগত খাবি খায়।